বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৬:২৩ পূর্বাহ্ন

পরিচালকদের বেনামি ঋণ ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

পরিচালকদের বেনামি ঋণ ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

স্বদেশ ডেস্ক:

ব্যাংক পরিচালকদের বেনামি ঋণ ঠেকাতে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কোনো ঋণখেলাপি যাতে নতুন করে ঋণ নিতে না পারে বা পরিচালকরা বেনামে নতুন করে ঋণ নিতে না পারে সেজন্য তালিকা হালনাগাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে কারো ঋণ প্রস্তাব কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো বা সিআইবিতে (কেন্দ্রীয় ঋণ তথ্য ভাণ্ডার) পাঠানোর আগে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নেয়া নিজ নামে বা স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর নামে নেয়া ঋণের তথ্য সিআইবি ডাটাবেজে অন্তর্ভুক্ত করতে বলা হয়েছে। এমন নির্দেশনা পরিপালনে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পাঠানো আবেদন বাতিল করা হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক সময়ে সময়ে ব্যাংকগুলোর ঋণ পরিদর্শনে গিয়ে খেলাপি করে থাকে। আবার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোও নির্ধারিত সময়ে ঋণ পরিশোধ না করলে ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী খেলাপি করে থাকে। সাধারণত কোনো ব্যক্তি বা গ্রুপ ঋণখেলাপি হলে নতুন কোনো ঋণ নিতে পারেন না। এমনকি কোনো জাতীয় নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করতে পারেন না। তাই নতুন ঋণ পাওয়ার জন্য ব্যাবসায়ী গ্রুপগুলো খেলাপি ঋণের কিস্তি পরিশোধ করে।

নতুন ঋণ পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশ ব্যাংকের কেন্দ্রীয় ঋণতথ্য ভাণ্ডার তথা সিআইবি থেকে অনাপত্তি নিতে হয়। আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এ অনাপত্তিপত্র নিতে হতো। এখন সিআইবি অনলাইন করায় সংশ্লিষ্ট ব্যাংক থেকেই এ অনাপত্তি দেয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী নতুন ঋণ পাওয়ার জন্য খেলাপি ঋণ পরিশোধ না করে উচ্চ আদালতে যান। তারা উচ্চ আদালত থেকে কয়েক মাসের জন্য খেলাপি ঋণের ওপর স্থগিতাদেশ নেন। অর্থাৎ ওই সময়ে তাকে ঋণখেলাপি বলা যাবে না। আদালত ওই ঋণ নির্দিষ্ট একটি সময় পর্যন্ত খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা যাবে না মর্মে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। ফলে ওইসব ঋণ খেলাপি হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিআইবিতে চিহ্নিত করা হলেও পরে তা নিয়মিত হিসাবে রাখতে বাধ্য হয়।

ঋণখেলাপিরা উচ্চ আদালত থেকে স্থাগিতাদেশ নিয়ে আবার তারা নতুন করে ঋণ নেন। এভাবে কোনো কোনো ব্যবসায়ী গ্রুপ একাধিক ব্যাংক থেকে শত শত কোটি টাকা বের করে নিয়ে যাচ্ছেন। আইনের ফাঁক গলিয়ে ঋণ নেয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকেরও করার কিছু থাকে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এর ফলে এক দিকে কিছু ব্যবসায়ী গ্রুপ ব্যাংক থেকে নতুন করে ঋণ বের করে নিচ্ছেন, অপর দিকে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি কিছু সময়ের জন্য গ্রাহকরা ঋণখেলাপির দুর্নাম থেকে বেঁচে যাচ্ছেন।

পরিচালকদের বেনামি ঋণ ঠেকাতে ও নতুন করে ঋণখেলাপিরা যাতে ঋণ নিতে না পারেন সেজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কঠোর অবস্থান নেয়া হয়েছে। এজন্য গতকাল ব্যাংকগুলোর জন্য দেয়া নতুন এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানের সিআইবি ডাটাবেজ সংশোধনের জন্য ব্যুরোতে আবেদনপত্র প্রেরণের পূর্বে আবেদনকারী ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান অবশ্যই তার গ্রাহককে ঋণপ্রদানকারী সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে এ বিষয়ে যোগাযোগের পরামর্শ প্রদান করবে। আবেদনকারী ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে তাদের পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান স্বাক্ষরিত কার্যবিবরণীর প্রথম ও সর্বশেষ পৃষ্ঠাসহ উপর্যুক্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত সংবলিত পৃষ্ঠার সত্যায়িত কপি অথবা ঋণ অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষের একস্তর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের সত্যায়িত কপি ব্যুরোতে দাখিল করতে হবে।

আবেদনকারী ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে আবেদনপত্রের সাথে বোর্ড মেমো, মেমোরেন্ডাম অ্যান্ড আর্টিকেলস অব অ্যাসোসিয়েশন এবং বিভিন্ন সময়ে ব্যুরো নির্দেশিত অন্যান্য দলিলাদির সত্যায়িত কপি সংযুক্ত করতে হবে। ব্যুরোতে আবেদন পাঠানোর আগে ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানের নবাগত পরিচালকদের সিআইবি ডাটাবেজে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানের বিদায়ী পরিচালকের ব্যক্তিগত গ্যারান্টি অথবা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের করপোরেট গ্যারান্টি অথবা উভয় গ্যারান্টি বহাল থাকলে আবেদনপত্র প্রেরণের আগেই তা সিআইবি ডাটাবেজে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আবেদনকারী ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানের বোর্ড রেজুলেশন এবং ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পরিষদের পরিবর্তন সিআইবি ডাটাবেজে বাস্তবায়নের জন্য ঋণদাতা ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠান বরাবর আবেদনপত্রের সত্যায়িত কপি সংযুক্ত করতে হবে।

এর বাইরেও সংশ্লিষ্ট ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে দলিলাদি দাখিলের নির্দেশনার তিন মাসের মধ্যেও যদি সিআইবি দলিলাদি গৃহীত না হয় তবে আবেদনকারী ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক দাখিলকৃত আবেদনপত্র বাতিল বলে গণ্য হবে। প্রয়োজনে এ বিষয়ে পরে নতুন আবেদনপত্র ব্যুরোতে দাখিল করতে হবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877